আজকের শিশু আগামী দিনের নেতৃত্ব। সুন্দরের পতাকাবাহী শিশুকিশোরেরা তাদের চরিত্রের সুবাসে পৃথিবীকে করবে মুগ্ধ। শিশুদের সু-শিক্ষিত, স্বাস্থ্যবানরূপে গড়ে তোলার মাধ্যমে সুন্দর পৃথিবী গড়া সম্ভব। সুখী সমাজ, সমৃদ্ধ দেশ ও শান্তিময় বিশ্বই শিশুদের স্বপ্ন। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে। সঠিক পরিচর্যার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের বড় একটি অংশ। অভাবের তাড়নায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে অনেক অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু। সমাজের অসহায় ও বঞ্চিত শিশুদেরকে প্রকৃষ্টরূপে গড়ে তোলার জন্য ফুলকুঁড়ির নানাবিধ কর্মসূচির মধ্যে সেবা ব্যাংক প্রকল্প অন্যতম। যা নিম্নোক্ত সেবামূলক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
শিক্ষাসেবা
শিশুরা নিষ্পাপ, নিরাপরাধ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। তারা প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় বেড়ে ওঠে। কেউ দক্ষতা, পারদর্শিতা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সমাজের শিশুদের একটি বড় অংশ প্রতি বছর ঝরে পড়ছে। এদের অনেকের মাথা গুঁজবার মতো নেই ঠিকানা। প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। দূরে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে। এরা বড় হয়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সমাজে বেড়ে চলছে ভিক্ষাবৃত্তি। এই অনাথ শিশুরা একটু সহযোগিতা, সহমর্মিতা পেলে অপরাধের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে। এদের দায়ভার সমাজের প্রতিটি মানুষের। ফুলকুঁড়ি আসর প্রতিভা বিকাশের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছে। গাজীপুরে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ৩৮জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে নিয়ে স্কুল শুরু হয়েছে। এখানে শিক্ষার পাশাপাশি হস্তশিল্পের কাজ শেখানো হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার বাহিরে ২৬ টি জেলায় প্রতি বছর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়।
স্বাস্থ্যসেবা
প্রফুল্ল মন আর সুস্থ শরীর না থাকলে কোনো কাজই ভালো লাগে না। ফুলকুঁড়ি সেবা ব্যাংক প্রকল্প নির্মল চরিত্র আর সুন্দর মনের সাথে সাথে সুবিধাবঞ্চিত শিশুকিশোরদের স্বাস্থ্যসেবা, সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুবর্তীরূপে গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্য সচেতেনতা বিষয়ক ক্যাম্পেইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, রক্তদান, ব্লাড গ্রুপিং, আই ক্যাম্প ইত্যাদি সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
বৃত্তিসেবা
আমাদের সমাজে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী দরিদ্রতার জন্য লেখাপড়া করতে পারে না। অনেক সময় তাদের অভিভাবকদের পক্ষে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ দেওয়া সম্ভব হয় না। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিযোগিতার আসর থেকে এরা ছিটকে পড়ে। অথচ এরা সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ পেলে এদের যোগ্যতাকে তুলে ধরতে পারতো। এরাও দেশের যোগ্যতম নাগরিকে পরিণত হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতো। ফুলকুঁড়ি আসর এসব দরিদ্র মেধাবীদের জন্য সামর্থ অনুযায়ী ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে।
শিশুবিকাশ কার্যক্রম
কোমলমতি শিশুদের প্রতিভা ও মানসিক বিকাশে সহায়তা এবং তাদের জন্য একটি কাঙ্খিত পরিবেশ তৈরির লক্ষে ফুলকুঁড়ি আসরের অবিরাম পথচলা। শিশুর শরীর, মন ও আত্মার সুষম বিকাশের মাধ্যমে গড়ে ওঠে যোগ্য নেতৃত্ব। প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য চাই সুস্থ, সুন্দর আর অনাবিল পরিবেশ। শিশুকিশোররা ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার মতো জ্ঞান, মানবিকতা আর নৈতিকতাবোধে পুষ্ট হলে দেশ পাবে যোগ্য নেতৃত্ব। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে একটি কাঙ্খিত পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে শিশুদের স্বপ্নের আঙ্গিনা গড়তে ফুলকুঁড়ি আসর নিজস্ব কার্যালয় স্থাপনসহ একটি শিশু কমপ্লেক্স গড়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এক বুক সাহস নিয়ে আমরা পা বাড়িয়েছি সেই স্বপ্নের পথে, যেখানে আপন ঠিকানায় শিশুরা গাইবে জীবন গড়ার গান।
আমাদের বিশ্বাস আপনার পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে শিশুদের গড়ে তোলা ও সেবা ব্যাংক প্রকল্পের কাজকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
তাই আমাদের আহ্বান- রাস্তার পাশে যে শিশুটি আপনার দিকে হাত বাড়ায় তাকে ‘হ্যাঁ’ বলুন। যে শিশুটি বৃষ্টির পানিতে সারা রাত ভিজে নির্ঘুম রাত কাটায় তাকে ‘হ্যাঁ’ বলুন। প্রতিদিন যে শিশুটির জ্বর বেড়েই চলছে অথচ টাকার অভাবে ডাক্তারের কাছে যেতে পারছে না তাকে ‘হ্যাঁ’ বলুন। আর যে শিশুটি খাতা কিনতে না পেরে স্কুলে যেতে পারছে না তাঁকেও ‘হ্যাঁ’ বলুন। ‘হ্যাঁ’ বলুন বাংলাদেশের সকল দুঃস্থ’ শিশুর জন্য। আপনার বাড়ানো স্নেহমাখা হাতই তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মহান আল্লাহ আপনার সকল প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমিন।